জনবহুল আমাদের এ দেশ। জনসংখ্যা বাড়ছে। সাথে বাড়ছে নানা সমস্যা। বাড়ছে বেকার সমস্যা। বাড়ছে অনৈতিক কর্মকান্ডও। দেশে অভাবের সীমা নেই, কিন্তু সম্পদ সীমিত। সরকারের একার পক্ষেও সম্ভব নয় এতসব অভাব মেটানো। তাহলে উপায়? কর্মসংস্থানের অভাবে দুরদর্শী ও বুদ্ধিমান লোকেরা বেছে নিচ্ছেন কিছু বিকল্প ব্যবস্থা। অনেকেই চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ঝুঁকে পড়ছেন শেয়ার ব্যবসায়, নানাধর্মী বিপণন, আত্মকর্মসংস্থানমূলক নানা কাজে ও আউটসোর্সিংয়ে। সবগুলোর মাঝে শেয়ার ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তা বেশি, কারণ এতে শ্রম কম, কিন্তু আয় করার সুযোগ বেশি। কিছু অসাধু লোকের জন্য শেয়ার বাজারেও দেখা দিয়েছে মন্দা। আজকের এ আয়োজনে উদ্যোগী মানুষের জন্য একটি সুসংবাদ রয়েছে। সুসংবাদটি হচ্ছে দেশীয় শেয়ার বাজার থেকে বড়, অথচ কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের একটি স্থান রয়েছে। এর নাম ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং বা সংক্ষেপে ফরেক্স। আমাদের দেশে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন এ বাজার নিয়েই এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। এতে ফরেক্স কী, কিভাবে এ ব্যবসায়ে জড়িত হবেন, ফরেক্সের সুবিধা ও অসুবিধা কী, ফরেক্স মার্কেটের বিস্তারিত ব্যবসায়সংশ্লিষ্ট কিছু শব্দের ব্যাখ্যাসহ ফরেক্সের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ফরেক্স শব্দটি আমাদের
দেশে নতুনই বলা
চলে। বাংলাদেশে এ
নিয়ে তেমন একটা
কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়নি।
তবে সবার কাছে
শিগগিরই তা যে
এক আলোড়নের জন্ম
দেবে, তা বোঝা
যাচ্ছে বাংলা ওয়েবসাইট ও
ব্লগগুলোতে ফরেক্সে চর্চার
প্রচার ও প্রসার
দেখে। আমাদের দেশ
বরাবরের মতোই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের
চেয়ে পিছিয়ে আছে।
ফরেক্সের ক্ষেত্রেও এর
ব্যতিক্রম হয়নি। এশিয়ার
কিছু দেশ যেখানে
ফরেক্স মার্কেটের বেশ
প্রসার ঘটিয়েছে, সেখানে
আমরা মাত্র হাঁটি
হাঁটি পা পা
করে এ পথে
এগুচ্ছি। পৃথিবীর মুদ্রা
কেনাবেচার সবচেয়ে বড়
বাজার ফরেক্সে বিচরণ
করার জন্য এ
কাজকে ভালো করে
জানতে-চিনতে হবে।
টাকা কামানোর সহজ
কোনো পদ্ধতি নেই।
শুধু শ্রম, অভিজ্ঞতা বা
মেধার একক ব্যবহার করে
টাকা কামানোর চিন্তা
করা বোকামি। বড়
ব্যবসায়ীরা শুধু শ্রম
নয়, এর সাথে
তাদের মেধা ও
অভিজ্ঞতার বিশাল ভান্ডারের সমন্বয়
করতে পেরেছেন বলেই
এরা আজ এতটা
সফল হতে পেরেছেন। তাই
ফরেক্সের জগতে আসার
আগে কিছু প্রস্ত্ততির প্রয়োজন। এখানে
ফরেক্সের সাধারণ কিছু
দিক তুলে ধরা
হলো, যাতে ফরেক্স
সম্পর্কে পাঠক সাধারণের কিছুটা
ধারণা হয়। আশা
করা যায়, ফরেক্সের জগতে
বিচরণের জন্য কী
কী বিষয়ে জানতে
হবে, তার একটি
সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন পাঠকেরা পেয়ে
যাবেন।
ফরেক্স কী?
ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে সংক্ষেপে ফরেক্স (ForeX) বা এফএক্স (FX) বা কারেন্সি মার্কেট বলা হয়। একে স্পট ফরেক্স বা রিটেইল ফরেক্সও বলা হয়। শেয়ার মার্কেটে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়। কিন্তু ফরেক্সের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করা হয়। এখানে আপনি একটি দেশের মুদ্রা বিক্রি করে আরেক দেশের মুদ্রা কিনতে পারবেন। আমেরিকার মুদ্রা ডলার এবং ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড। ফরেক্স মার্কেটে আপনি ডলার বিক্রি করে পাউন্ড কিনতে পারবেন বা পাউন্ড বিক্রি করে ডলার কিনতে পারবেন।
একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হবে। ধরুন, আপনি ফ্রান্সে বেড়াতে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিছু কেনার প্রয়োজন হলো। আপনার কাছে আছে মার্কিন ডলার। আপনি যদি দোকানিকে ডলার দেন, তবে সে তা নেবে না। সে চাইবে ইউরো। তাই আপনাকে আগে ডলারের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হবে ইউরো বা ইউরোপীয় দেশের মুদ্রা ফ্রাঙ্ক । মানি এক্সচেঞ্জ করার জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে মানি এক্সচেঞ্জারের। তার কাছে ১০০ ডলার দিয়ে আপনি পেলেন ৭০ ইউরো। এখানে আপনি ইউরো কিনেছেন, মার্কিন ডলার বিক্রি করেছেন।
ফরেক্স মার্কেট
পৃথিবীর অন্যতম একটি শেয়ার বাজার হচ্ছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিদিন প্রায় ৭৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের লেনদেন হয় এ বাজারে। অর্থের পরিমাণ কী বেশি বড় মনে হচ্ছে? ফরেক্স মার্কেটের তুলনায় তা অতি নগণ্য। ফরেক্স মার্কেটে দিনে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সমান অর্থের লেনদেন হয়। ফরেক্সের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেন্টার নেই, যে এককভাবে এত বড় অর্থের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বা বিপুল অর্থের বিনিময় দেখাশোনা করে। প্রধানত বড় বড় ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারদের মাঝে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশাল এ বাজারে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। ফরেক্স আগে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল না এ জগতে। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে ফরেক্স। অনলাইনে ইন্টারনেট কানেকশনের সাহায্যে খুব সহজেই যেকেউ প্রবেশ করতে পারেন এ বিশাল মুদ্রা বাজারে। সাধারণ মানুষ এ বাজারে অংশ নেয়ার পর থেকে এ বাজারের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়েছে।
নিচে ফরেক্স মার্কেট (FX), নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE), টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ (TSE) ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (LSE)-এর মধ্যে গড় বেচাকেনার পরিমাণের একটি উদাহরণ গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। এটি ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের বাজারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
গ্রাফটি বা লেখচিত্রটি থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে ফরেক্স মার্কেটের গড় বেচাকেনার পরিমাণ তথা অ্যাভারেজ ট্রেডিং ভলিউম ছিল ৩৯৮০০০ কোটি ডলার, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ৭৪০০ কোটি ডলার, টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের ১৮০০ কোটি ডলার ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের ৭০০ কোটি ডলার। ফরেক্স মার্কেট নিউইয়র্ক, টোকিও ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটের চেয়ে যথাক্রমে ৫৩, ২২১ ও ৫৬৮ গুণ বড়। প্রায় ৪X১০১২ মার্কিন ডলার মূল্যের এ বিশাল বাজারে রিটেইল ট্রেডার বা খুচরো ব্যবসায়ী আমরা। আমরা যারা এখানে ছোটখাটো বিনিয়োগ করব তাদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ১.৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আকার দেখেই বুঝতে পারছেন কত বড় একটি মার্কেটে আপনি বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
কী বেচাকেনা হয় ফরেক্স মার্কেটে?
এতক্ষণে সবাই জেনে গেছেন ফরেক্স মার্কেটে লেনদেন হয় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু শুধু কি বিদেশী মুদ্রাই বেচাকেনা হয় এ বাজারে? মুদ্রা ছাড়াও সোনা, রূপা ও তেলের বেচাকেনা হয় এ ফরেক্স মার্কেটে। তবে এগুলোর দামের তারতম্য খুব একটা বেশি হয় না। তাই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় মুদ্রা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম বেছে নিলে। সবার নজর মুদ্রা লেনদেনের দিকেই বেশি। কারণ, মুদ্রার বাজারে দামের ওঠানামা চলে বেশি। কোনো দেশের মুদ্রা কেনার অর্থ সে দেশের অর্থনীতির একটা শেয়ার কিনলেন আপনি। সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে এবং উন্নতির দিকে গেলে আপনার লাভ হবে বেশি। আর সে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলে আপনার ক্ষতি। তাই অর্থনীতিবিদদের ভাষায় বলতে গেলে বলা লাগে : The eXchange rate of a currency versus other currencies is a reflection of the condition of that country’s economy, compared to other countries’ economies ।
ফরেক্স মার্কেটের প্রধান মুদ্রাগুলো
শক্তিশালী কিছু মুদ্রার বেচাকেনা বেশি হয় ফরেক্স মার্কেটে। এ শক্তিশালী কারেন্সি বা মুদ্রাগুলোকে বলা হয় মেজর কারেন্সি বা প্রধান মুদ্রা। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো, ব্রিটেনের পাউন্ড, কানাডার ডলার, অস্ট্রেলিয়ার ডলার ইত্যাদি।
কারেন্সি সিম্বল বা মুদ্রা সঙ্কেতে তিনটি অক্ষর থাকে। প্রথম দুটি দেশের নাম ও শেষেরটি সে দেশের মুদ্রার নামের প্রথম অক্ষর প্রকাশ করে। যেমন : USD হচ্ছে মার্কিন ডলারের সঙ্কেত। এখানে US দিয়ে United States এবং D দিয়ে Doller বোঝাচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত নাম BD, কারেন্সি হচ্ছে Taka আর আমাদের দেশীয় মুদ্রার সঙ্কেত হচ্ছে BDT। মজার ব্যাপার হচ্ছে ডলারের আরো অনেক নাম রয়েছে, যেমন : greenbacks, bones, benjis, benjamins, cheddar, paper, loot, scrilla, cheese, bread, moolah, dead presidents Ges cash money। এছাড়াও পেরুতে ডলারের নিকনেম বা ডাকনাম হচ্ছে কোকো।
কারেন্সি পেয়ার
ফরেক্সে একটি মুদ্রা কেনা হয় আরেকটি বেচা হয়। তাই এখানে দুটি মুদ্রার কারবার হচ্ছে। মুদ্রার এ বেচাকেনার কাজ করবে ব্রোকার বা ডিলার, একটি মুদ্রাজোড়ের বা কারেন্সি পেয়ারের ওপর ভিত্তি করে। ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যাক, শেয়ার মার্কেটের নিয়ম হচ্ছে যেকোনো শেয়ারের মূল্য সে দেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হবে। যেমন- বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে কোনো শেয়ারের মূল্য ধরা হয় টাকায়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে এভাবে কোনো দেশের মুদ্রা বা কারেন্সির মান নির্ধারণ অসম্ভব। শুধু ইউরো বা ডলারের কোনো মূল্য থাকতে পারে না। যেমন- ১ ডলার দিয়ে ৭৪ বাংলাদেশী টাকা পাওয়া যায়। একইভাবে ১ ডলার দিয়ে মাত্র ০.৬৯ ইউরো অথবা ০.৬১ ব্রিটিশ পাউন্ড পাওয়া সম্ভব। আবার যদি ভারতের রুপির কথা ধরা হয়, তাহলে ১ ডলার দিয়ে আপনি ৪৫ রুপি পাবেন। তাহলে ডলারের মূল্য আসলে কোনটি? বিভিন্ন দেশের মানুষই তো ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করে, কোন দামে তারা ডলার কিনবে? এ জন্যই ফরেক্স মার্কেটে সবকিছু কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে ট্রেড হয়। মার্কিন ডলার ও ইউরোর মুদ্রাজোড় হচ্ছে USD/EUR এবং ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের জোড় হচ্ছে GBP/JPY।
ফরেক্সের বাজারে তাই মুদ্রাজোড়ের ভূমিকা অনেক এবং বেচাকেনার সময় যেকোনো জোড়কে বেছে নিতে পারেন। মুদ্রার মাঝে এ প্রতিযোগিতাকে টাগ অব ওয়ারের সাথে তুলনা করতে পারেন। যে কারেন্সি যত বেশি শক্তিশালী হবে অপর পক্ষের কারেন্সি তত দুর্বল।
ফরেক্সে কারেন্সির এ জোড়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এগুলো হচ্ছে :
০১. প্রধান মুদ্রাজোড় (মেজর কারেন্সি পেয়ার);
০২. গৌণ মুদ্রাজোড় (মাইনর/ক্রস-কারেন্সি পেয়ার);
০৩. এক্সোটিক মুদ্রাজোড় (এক্সোটিক পেয়ার)।
প্রধান মুদ্রাজোড় :
প্রধান মুদ্রাজোড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাতে মার্কিন ডলারের উপস্থিতি। মার্কিন ডলারের সাথে অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত শক্তিশালী মুদ্রাজোড়কেই বলা হয় প্রধান মুদ্রাজোড়। এখানে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর নাম, দেশ ও ফরেক্সের ভাষায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হলো-
গৌণ মুদ্রাজোড় :
মার্কিন ডলার বাদে অন্যান্য প্রধান কারেন্সির মাঝে যে জোড় বা ক্রস হয় সেগুলোকে গৌণ বা অপ্রধান মুদ্রাজোড় বলে। ইংরেজিতে এদের ক্রস কারেন্সি পেয়ার বলা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রস পেয়ারগুলো সাধারণত ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েনের মাঝে দেখা যায়। ইউরোকে প্রথমে বা বেস কারেন্সি হিসেবে রেখে তার সাথে অন্য কোনো মুদ্রার ক্রস করা হলে বা জোড়া বানানো হলে তাকে উইরো ক্রস বলে। এভাবেই ইয়েন ক্রস, পাউন্ড ক্রস ও অন্যান্য ক্রস হতে পারে। ইয়েন ক্রসের ক্ষেত্রে ইউরো/ইয়েন এবং পাউন্ড/ইয়েন মুদ্রাজোড়ের ডাকনাম যথাক্রমে ইয়ুপ্পি ও গুপ্পি। নিচের ছকে ইউরো ক্রসের উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
এক্সোটিক পেয়ার :
এক্সোটিক পেয়ারের বেলায় একটি প্রধান কারেন্সির সাথে কম শক্তিশালী বা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকা কোনো কারেন্সির সাথে যে পেয়ার বা জোড় করা হয় তাকে এক্সোটিক পেয়ার বলে। কম শক্তিশালী কারেন্সির মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোর পেসো, ডেনমার্কের ক্রোন, থাইল্যান্ডের বাথ, বাংলাদেশের টাকা, ভারতের রুপি ইত্যাদি। জোড় বানানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় প্রধান কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলার থাকে। এ ধরনের পেয়ার দিয়ে তেমন একটা ট্রেড হয় না। প্রধান কারেন্সি পেয়ার ও ক্রস পেয়ারগুলো নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়ে থাকে। নিচে কিছু এক্সোটিক পেয়ারের উদাহরণ দেয়া হলো-
কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশন
ফরেক্স মার্কেটে লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে মধ্যমণি হয়ে আছে মার্কিন ডলার। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ফরেক্স বাজারে ডলারের ট্রানজেকশন হয়েছে প্রায় ৮৪.৯%। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ স্থানে ছিল যথাক্রমে ইউরো (৩৯.১%), ইয়েন (১৯.০%) ও পাউন্ড (১২.৯%)। নিচে একটি গ্রাফ দেয়া হলো, যাতে ফরেক্স মার্কেটের কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশনের সহজ একটি চিত্র দেয়া আছে।
কারেন্সির রাজা ডলার
ফরেক্স মার্কেটে ডলার আধিপত্য বিস্তার করে আছে শুরুর দিক থেকেই। বেশিরভাগ প্রধান কারেন্সি পেয়ারে ডলারের উপস্থিতি ডলারের আধিপত্যকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। ফরেক্স রিজার্ভে কারেন্সি কম্পোজিশনের কথা চিন্তা করলে ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় ডলারের পরিমাণ ৬২%। তাই কারেন্সির রাজা হিসেবে ডলারকে অভিহিত করাই যায়। চিত্রটিতে চোখ বুলালেই কারেন্সি কম্পোজিশনে ফরেক্স রিজার্ভে বাকি কারেন্সিগুলোর অবস্থান জানা যাবে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর অফিশিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৬২%) জুড়ে আছে মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক কোম্পানি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাই ডলারের সাহায্যে লেনদেন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফরেক্স মার্কেটে মার্কিন ডলারের মুখ্য ভূমিকা পালন করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ০১. যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি; ০২. মার্কিন ডলার পৃথিবীর সব দেশের রিজার্ভ কারেন্সি; ০৩. আমেরিকার রয়েছে সবচেয়ে বড় লিকুইড ফিনান্সিয়াল মার্কেট; ০৪. যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থা বেশ মজবুত; ০৫. মিলিটারি শক্তির দিক থেকেও আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে; ০৬. মার্কিন ডলার বেশিরভাগ ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ যদি কোনো আরব দেশের কাছ থেকে তেল কিনতে চায় তবে তা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। তেল কেনার জন্য টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করে নিতে হবে। অর্থাৎ টাকা বিক্রি করে ডলার কিনতে হবে, তারপর তা দিয়ে তেল কিনে নিতে হবে।
ফরেক্স করবেন কেন?
ফরেক্স ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কী এবং কেনো ব্যবসায়ে নামবেন তা জেনে নেয়া যাক : ০১. এতে কোনো ক্লিয়ারিং ফি, এক্সচেঞ্জ ফি, সরকারি ফি এবং সর্বোপরি কোনোরকমের ব্রোকারেজ ফি দিতে হয় না; ০২. মার্কেটে লেনদেনের মাঝে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই; ০৩. লটের আকারের কোনো নির্দিষ্টতা নেই; ০৪. রিটেইল ট্রানজেকশন কস্ট বা বিড/আস্ক স্প্রেড সাধারণত বেশ কম, যা ০.১ শতাংশের নিচে থাকে। বড় ডিলারদের ক্ষেত্রে তা ০.০৭% পর্যন্ত হতে পারে; ০৫. সপ্তাহের ৫ দিনে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এ বাজার; ০৬. মার্কেট এত বড় যে, কোনো সেন্ট্রাল ব্যাংকেরও ক্ষমতা নেই ফরেক্স মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার; ০৭. লেভারেজ বা লোন পাওয়ার সুবিধা; ০৮. বাজারে বেশ তারল্য বিদ্যমান; ০৯. নতুন ও কম পুঁজির ট্রেডারদের জন্য মাইক্রো ও মিনি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, যা ১ ডলার থেকে শুরু এবং ১০. অ্যাকাউন্ট খোলা, সফটওয়্যার, পরামর্শ ও সাহায্য সবকিছুই সহজলভ্য ও তার জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না।
ফরেক্স বনাম শেয়ার মার্কেট
নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, সেখানে স্টকের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এত স্টকের ওপর নজর রাখা এবং সেগুলো নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে কতটা ঝামেলার কাজ, তা সহজেই অনুমেয়। ফরেক্স মার্কেটেও রয়েছে কয়েক ডজন কারেন্সি পেয়ার, কিন্তু বেশি লেনদেন হয়ে থাকে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর মধ্যে। তাই ৪-৫টি প্রধান কারেন্সি পেয়ারের দিকে নজর রাখার ব্যাপারটা খুব যে কঠিন তা কিন্তু নয়। আসুন দেখা যাক, ফরেক্সের সাথে স্টক মার্কেটের পার্থক্য :
ছকে উল্লিখিত পার্থক্য দেখে ফরেক্সকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। কারণ, স্টক মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স অনেক বড় ও অনেক বেশি সুবিধাজনক।
ফরেক্স মার্কেটের গঠন
স্টক মার্কেটের একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকে। স্টক মার্কেট একটি কেন্দ্রায়িত বাজার। কিন্তু ফরেক্স মার্কেট বিকেন্দ্রায়িত বাজার। এর কোনো কেন্দ্রীয় বাজার নেই। ফরেক্স মার্কেট হায়ারাকি হচ্ছে- প্রধান ব্যাংকগুলো ইলেকট্রনিক ব্রোকিং সার্ভিসে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাংকগুলো রিটেইল মার্কেট মেকারস এবং কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলো রিটেইল ট্রেডারস। মার্কেটের খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে বড় আকারের ব্যাংকগুলো, কমার্শিয়াল কোম্পানি, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং একক বিনিয়োগকারী।
ফরেক্সের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিরতা আনার প্রয়োজন উপলব্ধি করে। তখন ১৯৭১ সালের দিকে ব্রিটন উডস সিস্টেম চালু হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারেন্সির বদলে স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমাতে। কিন্তু তাতে এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমলেও ফেয়ার একচেঞ্জ রেট বের করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে কমপিউটার ও নেটওয়ার্কের উন্নতির ফলে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ট্রেডিং প্লাটফর্ম বানাতে শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান তাদের ট্রেডিং প্লাটফর্ম হিসেবে ইন্টারনেটকে বেছে নেয়। এরপর থেকেই শুরু ফরেক্সের যাত্রা। ফরেক্সের চর্চা অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নতুনই বলা চলে। কারণ, অনেকেই এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।
ফরেক্স সম্পর্কিত কিছু পদবাচ্য
ফরেক্সে বেশ কিছু শব্দ বা পদবাচ্য রয়েছে, যার অর্থ নতুনদের জন্য বোঝা কঠিন। তাই ফরেক্সের সাথে যুক্ত শব্দগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে ফরেক্সে আসা উচিত নয়। ফরেক্স বোঝার জন্য এসব শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম। ফরেক্সে অনেক টার্ম বা পদবাচ্য আছে, যা কাজ করতে করতে আপনি জানতে পারবেন। কিন্তু যে টার্ম বা শব্দগুলো জানা না থাকলেই নয়, সেগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
কারেন্সি পেয়ার :
কারেন্সি পেয়ার নিয়ে এখানে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখানে সহজ কিছু উদাহরণের ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। আগেই জেনেছি কারেন্সি পেয়ারগুলোকে কিভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন : মার্কিন ডলার ও ইউরোর কারেন্সি পেয়ারের সঙ্কেত হচ্ছে USD/EUR। এখন যদি লেখা থাকে ১ USD/EUR = ০.৬৯৩০, তাহলে বুঝতে হবে ১ ডলার দিয়ে আপনি পাবেন ০.৬৯৩০ ইউরো। বিপরীতভাবে যদি লেখা থাকে ১ EUR/USD = ১.৪৪২৮, তাহলে বুঝতে হবে ১ ইউরো দিয়ে কেনা যাবে ১.৪৪২৮ ডলার।
পিপস :
ওপরের কারেন্সি পেয়ারের ব্যাখ্যায় কারেন্সি পেয়ার রেটের বেলায় দশমিকের পরে চার ঘর পর্যন্ত সংখ্যা রাখা হয়েছে। অনেকের মাথায় আসতে পারে এত সূক্ষ্ম করে লেখার কী দরকার? যারা শেয়ার ব্যবসায় করেন, তাদের প্রশ্ন হতে পারে শেয়ারের মূল্য সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় থাকে, যেমন : শেয়ারের মূল্য ৫০ টাকা হতে পারে বা ১০০০ টাকা হয়ে থাকে? খুব কমই শেয়ার দেখা যায় যার মূল্য দশমিক পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু ফরেক্সের বেলায় এত সূক্ষ্ম হিসাবের কী প্রয়োজন? এক্ষেত্রে বলা যায়, শেয়ার হচ্ছে দুটি কারেন্সির অনুপাত, তাই এখানে মুদ্রার মূল্যমানের সূক্ষ্ম পার্থক্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারে আমরা এমনভাবে হিসাব করি না যে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের বদলে কতগুলো এয়ারটেলের শেয়ার পাব। শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্যাটাই আসল, যার দাম সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় হয়ে থাকে।
ফরেক্স কী?
ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে সংক্ষেপে ফরেক্স (ForeX) বা এফএক্স (FX) বা কারেন্সি মার্কেট বলা হয়। একে স্পট ফরেক্স বা রিটেইল ফরেক্সও বলা হয়। শেয়ার মার্কেটে কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়। কিন্তু ফরেক্সের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করা হয়। এখানে আপনি একটি দেশের মুদ্রা বিক্রি করে আরেক দেশের মুদ্রা কিনতে পারবেন। আমেরিকার মুদ্রা ডলার এবং ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড। ফরেক্স মার্কেটে আপনি ডলার বিক্রি করে পাউন্ড কিনতে পারবেন বা পাউন্ড বিক্রি করে ডলার কিনতে পারবেন।
একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হবে। ধরুন, আপনি ফ্রান্সে বেড়াতে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিছু কেনার প্রয়োজন হলো। আপনার কাছে আছে মার্কিন ডলার। আপনি যদি দোকানিকে ডলার দেন, তবে সে তা নেবে না। সে চাইবে ইউরো। তাই আপনাকে আগে ডলারের বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হবে ইউরো বা ইউরোপীয় দেশের মুদ্রা ফ্রাঙ্ক । মানি এক্সচেঞ্জ করার জন্য আপনাকে সাহায্য নিতে হবে মানি এক্সচেঞ্জারের। তার কাছে ১০০ ডলার দিয়ে আপনি পেলেন ৭০ ইউরো। এখানে আপনি ইউরো কিনেছেন, মার্কিন ডলার বিক্রি করেছেন।
ফরেক্স মার্কেট
পৃথিবীর অন্যতম একটি শেয়ার বাজার হচ্ছে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিদিন প্রায় ৭৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের লেনদেন হয় এ বাজারে। অর্থের পরিমাণ কী বেশি বড় মনে হচ্ছে? ফরেক্স মার্কেটের তুলনায় তা অতি নগণ্য। ফরেক্স মার্কেটে দিনে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সমান অর্থের লেনদেন হয়। ফরেক্সের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেন্টার নেই, যে এককভাবে এত বড় অর্থের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বা বিপুল অর্থের বিনিময় দেখাশোনা করে। প্রধানত বড় বড় ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্রোকারদের মাঝে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশাল এ বাজারে অর্থের বিনিময় হয়ে থাকে। ফরেক্স আগে বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল না এ জগতে। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে যাওয়ায় ছোট ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে ফরেক্স। অনলাইনে ইন্টারনেট কানেকশনের সাহায্যে খুব সহজেই যেকেউ প্রবেশ করতে পারেন এ বিশাল মুদ্রা বাজারে। সাধারণ মানুষ এ বাজারে অংশ নেয়ার পর থেকে এ বাজারের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়েছে।
নিচে ফরেক্স মার্কেট (FX), নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (NYSE), টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ (TSE) ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ (LSE)-এর মধ্যে গড় বেচাকেনার পরিমাণের একটি উদাহরণ গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো। এটি ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের বাজারের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
গ্রাফটি বা লেখচিত্রটি থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে ফরেক্স মার্কেটের গড় বেচাকেনার পরিমাণ তথা অ্যাভারেজ ট্রেডিং ভলিউম ছিল ৩৯৮০০০ কোটি ডলার, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ৭৪০০ কোটি ডলার, টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের ১৮০০ কোটি ডলার ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের ৭০০ কোটি ডলার। ফরেক্স মার্কেট নিউইয়র্ক, টোকিও ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটের চেয়ে যথাক্রমে ৫৩, ২২১ ও ৫৬৮ গুণ বড়। প্রায় ৪X১০১২ মার্কিন ডলার মূল্যের এ বিশাল বাজারে রিটেইল ট্রেডার বা খুচরো ব্যবসায়ী আমরা। আমরা যারা এখানে ছোটখাটো বিনিয়োগ করব তাদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ১.৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার। আকার দেখেই বুঝতে পারছেন কত বড় একটি মার্কেটে আপনি বিচরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
কী বেচাকেনা হয় ফরেক্স মার্কেটে?
এতক্ষণে সবাই জেনে গেছেন ফরেক্স মার্কেটে লেনদেন হয় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু শুধু কি বিদেশী মুদ্রাই বেচাকেনা হয় এ বাজারে? মুদ্রা ছাড়াও সোনা, রূপা ও তেলের বেচাকেনা হয় এ ফরেক্স মার্কেটে। তবে এগুলোর দামের তারতম্য খুব একটা বেশি হয় না। তাই দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় মুদ্রা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম বেছে নিলে। সবার নজর মুদ্রা লেনদেনের দিকেই বেশি। কারণ, মুদ্রার বাজারে দামের ওঠানামা চলে বেশি। কোনো দেশের মুদ্রা কেনার অর্থ সে দেশের অর্থনীতির একটা শেয়ার কিনলেন আপনি। সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে এবং উন্নতির দিকে গেলে আপনার লাভ হবে বেশি। আর সে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামলে আপনার ক্ষতি। তাই অর্থনীতিবিদদের ভাষায় বলতে গেলে বলা লাগে : The eXchange rate of a currency versus other currencies is a reflection of the condition of that country’s economy, compared to other countries’ economies ।
ফরেক্স মার্কেটের প্রধান মুদ্রাগুলো
শক্তিশালী কিছু মুদ্রার বেচাকেনা বেশি হয় ফরেক্স মার্কেটে। এ শক্তিশালী কারেন্সি বা মুদ্রাগুলোকে বলা হয় মেজর কারেন্সি বা প্রধান মুদ্রা। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো, ব্রিটেনের পাউন্ড, কানাডার ডলার, অস্ট্রেলিয়ার ডলার ইত্যাদি।
কারেন্সি সিম্বল বা মুদ্রা সঙ্কেতে তিনটি অক্ষর থাকে। প্রথম দুটি দেশের নাম ও শেষেরটি সে দেশের মুদ্রার নামের প্রথম অক্ষর প্রকাশ করে। যেমন : USD হচ্ছে মার্কিন ডলারের সঙ্কেত। এখানে US দিয়ে United States এবং D দিয়ে Doller বোঝাচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত নাম BD, কারেন্সি হচ্ছে Taka আর আমাদের দেশীয় মুদ্রার সঙ্কেত হচ্ছে BDT। মজার ব্যাপার হচ্ছে ডলারের আরো অনেক নাম রয়েছে, যেমন : greenbacks, bones, benjis, benjamins, cheddar, paper, loot, scrilla, cheese, bread, moolah, dead presidents Ges cash money। এছাড়াও পেরুতে ডলারের নিকনেম বা ডাকনাম হচ্ছে কোকো।
কারেন্সি পেয়ার
ফরেক্সে একটি মুদ্রা কেনা হয় আরেকটি বেচা হয়। তাই এখানে দুটি মুদ্রার কারবার হচ্ছে। মুদ্রার এ বেচাকেনার কাজ করবে ব্রোকার বা ডিলার, একটি মুদ্রাজোড়ের বা কারেন্সি পেয়ারের ওপর ভিত্তি করে। ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যাক, শেয়ার মার্কেটের নিয়ম হচ্ছে যেকোনো শেয়ারের মূল্য সে দেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হবে। যেমন- বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে কোনো শেয়ারের মূল্য ধরা হয় টাকায়। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে এভাবে কোনো দেশের মুদ্রা বা কারেন্সির মান নির্ধারণ অসম্ভব। শুধু ইউরো বা ডলারের কোনো মূল্য থাকতে পারে না। যেমন- ১ ডলার দিয়ে ৭৪ বাংলাদেশী টাকা পাওয়া যায়। একইভাবে ১ ডলার দিয়ে মাত্র ০.৬৯ ইউরো অথবা ০.৬১ ব্রিটিশ পাউন্ড পাওয়া সম্ভব। আবার যদি ভারতের রুপির কথা ধরা হয়, তাহলে ১ ডলার দিয়ে আপনি ৪৫ রুপি পাবেন। তাহলে ডলারের মূল্য আসলে কোনটি? বিভিন্ন দেশের মানুষই তো ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করে, কোন দামে তারা ডলার কিনবে? এ জন্যই ফরেক্স মার্কেটে সবকিছু কারেন্সি পেয়ারের মাধ্যমে ট্রেড হয়। মার্কিন ডলার ও ইউরোর মুদ্রাজোড় হচ্ছে USD/EUR এবং ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের জোড় হচ্ছে GBP/JPY।
ফরেক্সের বাজারে তাই মুদ্রাজোড়ের ভূমিকা অনেক এবং বেচাকেনার সময় যেকোনো জোড়কে বেছে নিতে পারেন। মুদ্রার মাঝে এ প্রতিযোগিতাকে টাগ অব ওয়ারের সাথে তুলনা করতে পারেন। যে কারেন্সি যত বেশি শক্তিশালী হবে অপর পক্ষের কারেন্সি তত দুর্বল।
ফরেক্সে কারেন্সির এ জোড়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এগুলো হচ্ছে :
০১. প্রধান মুদ্রাজোড় (মেজর কারেন্সি পেয়ার);
০২. গৌণ মুদ্রাজোড় (মাইনর/ক্রস-কারেন্সি পেয়ার);
০৩. এক্সোটিক মুদ্রাজোড় (এক্সোটিক পেয়ার)।
প্রধান মুদ্রাজোড় :
প্রধান মুদ্রাজোড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাতে মার্কিন ডলারের উপস্থিতি। মার্কিন ডলারের সাথে অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত শক্তিশালী মুদ্রাজোড়কেই বলা হয় প্রধান মুদ্রাজোড়। এখানে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর নাম, দেশ ও ফরেক্সের ভাষায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হলো-
গৌণ মুদ্রাজোড় :
মার্কিন ডলার বাদে অন্যান্য প্রধান কারেন্সির মাঝে যে জোড় বা ক্রস হয় সেগুলোকে গৌণ বা অপ্রধান মুদ্রাজোড় বলে। ইংরেজিতে এদের ক্রস কারেন্সি পেয়ার বলা হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রস পেয়ারগুলো সাধারণত ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েনের মাঝে দেখা যায়। ইউরোকে প্রথমে বা বেস কারেন্সি হিসেবে রেখে তার সাথে অন্য কোনো মুদ্রার ক্রস করা হলে বা জোড়া বানানো হলে তাকে উইরো ক্রস বলে। এভাবেই ইয়েন ক্রস, পাউন্ড ক্রস ও অন্যান্য ক্রস হতে পারে। ইয়েন ক্রসের ক্ষেত্রে ইউরো/ইয়েন এবং পাউন্ড/ইয়েন মুদ্রাজোড়ের ডাকনাম যথাক্রমে ইয়ুপ্পি ও গুপ্পি। নিচের ছকে ইউরো ক্রসের উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
এক্সোটিক পেয়ার :
এক্সোটিক পেয়ারের বেলায় একটি প্রধান কারেন্সির সাথে কম শক্তিশালী বা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকা কোনো কারেন্সির সাথে যে পেয়ার বা জোড় করা হয় তাকে এক্সোটিক পেয়ার বলে। কম শক্তিশালী কারেন্সির মধ্যে রয়েছে মেক্সিকোর পেসো, ডেনমার্কের ক্রোন, থাইল্যান্ডের বাথ, বাংলাদেশের টাকা, ভারতের রুপি ইত্যাদি। জোড় বানানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় প্রধান কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলার থাকে। এ ধরনের পেয়ার দিয়ে তেমন একটা ট্রেড হয় না। প্রধান কারেন্সি পেয়ার ও ক্রস পেয়ারগুলো নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়ে থাকে। নিচে কিছু এক্সোটিক পেয়ারের উদাহরণ দেয়া হলো-
কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশন
ফরেক্স মার্কেটে লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে মধ্যমণি হয়ে আছে মার্কিন ডলার। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী ফরেক্স বাজারে ডলারের ট্রানজেকশন হয়েছে প্রায় ৮৪.৯%। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ স্থানে ছিল যথাক্রমে ইউরো (৩৯.১%), ইয়েন (১৯.০%) ও পাউন্ড (১২.৯%)। নিচে একটি গ্রাফ দেয়া হলো, যাতে ফরেক্স মার্কেটের কারেন্সি ডিস্ট্রিবিউশনের সহজ একটি চিত্র দেয়া আছে।
কারেন্সির রাজা ডলার
ফরেক্স মার্কেটে ডলার আধিপত্য বিস্তার করে আছে শুরুর দিক থেকেই। বেশিরভাগ প্রধান কারেন্সি পেয়ারে ডলারের উপস্থিতি ডলারের আধিপত্যকে আরো শক্তিশালী করে তুলছে। ফরেক্স রিজার্ভে কারেন্সি কম্পোজিশনের কথা চিন্তা করলে ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় ডলারের পরিমাণ ৬২%। তাই কারেন্সির রাজা হিসেবে ডলারকে অভিহিত করাই যায়। চিত্রটিতে চোখ বুলালেই কারেন্সি কম্পোজিশনে ফরেক্স রিজার্ভে বাকি কারেন্সিগুলোর অবস্থান জানা যাবে।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর অফিশিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৬২%) জুড়ে আছে মার্কিন ডলার। বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক কোম্পানি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাই ডলারের সাহায্যে লেনদেন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফরেক্স মার্কেটে মার্কিন ডলারের মুখ্য ভূমিকা পালন করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ০১. যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি; ০২. মার্কিন ডলার পৃথিবীর সব দেশের রিজার্ভ কারেন্সি; ০৩. আমেরিকার রয়েছে সবচেয়ে বড় লিকুইড ফিনান্সিয়াল মার্কেট; ০৪. যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থা বেশ মজবুত; ০৫. মিলিটারি শক্তির দিক থেকেও আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে; ০৬. মার্কিন ডলার বেশিরভাগ ব্যবসায়িক লেনদেনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ যদি কোনো আরব দেশের কাছ থেকে তেল কিনতে চায় তবে তা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না। তেল কেনার জন্য টাকাকে ডলারে রূপান্তরিত করে নিতে হবে। অর্থাৎ টাকা বিক্রি করে ডলার কিনতে হবে, তারপর তা দিয়ে তেল কিনে নিতে হবে।
ফরেক্স করবেন কেন?
ফরেক্স ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য কী এবং কেনো ব্যবসায়ে নামবেন তা জেনে নেয়া যাক : ০১. এতে কোনো ক্লিয়ারিং ফি, এক্সচেঞ্জ ফি, সরকারি ফি এবং সর্বোপরি কোনোরকমের ব্রোকারেজ ফি দিতে হয় না; ০২. মার্কেটে লেনদেনের মাঝে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই; ০৩. লটের আকারের কোনো নির্দিষ্টতা নেই; ০৪. রিটেইল ট্রানজেকশন কস্ট বা বিড/আস্ক স্প্রেড সাধারণত বেশ কম, যা ০.১ শতাংশের নিচে থাকে। বড় ডিলারদের ক্ষেত্রে তা ০.০৭% পর্যন্ত হতে পারে; ০৫. সপ্তাহের ৫ দিনে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এ বাজার; ০৬. মার্কেট এত বড় যে, কোনো সেন্ট্রাল ব্যাংকেরও ক্ষমতা নেই ফরেক্স মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার; ০৭. লেভারেজ বা লোন পাওয়ার সুবিধা; ০৮. বাজারে বেশ তারল্য বিদ্যমান; ০৯. নতুন ও কম পুঁজির ট্রেডারদের জন্য মাইক্রো ও মিনি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন, যা ১ ডলার থেকে শুরু এবং ১০. অ্যাকাউন্ট খোলা, সফটওয়্যার, পরামর্শ ও সাহায্য সবকিছুই সহজলভ্য ও তার জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না।
ফরেক্স বনাম শেয়ার মার্কেট
নিউইয়র্ক স্টক মার্কেটের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, সেখানে স্টকের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এত স্টকের ওপর নজর রাখা এবং সেগুলো নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে কতটা ঝামেলার কাজ, তা সহজেই অনুমেয়। ফরেক্স মার্কেটেও রয়েছে কয়েক ডজন কারেন্সি পেয়ার, কিন্তু বেশি লেনদেন হয়ে থাকে প্রধান কারেন্সি পেয়ারগুলোর মধ্যে। তাই ৪-৫টি প্রধান কারেন্সি পেয়ারের দিকে নজর রাখার ব্যাপারটা খুব যে কঠিন তা কিন্তু নয়। আসুন দেখা যাক, ফরেক্সের সাথে স্টক মার্কেটের পার্থক্য :
ছকে উল্লিখিত পার্থক্য দেখে ফরেক্সকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। কারণ, স্টক মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স অনেক বড় ও অনেক বেশি সুবিধাজনক।
ফরেক্স মার্কেটের গঠন
স্টক মার্কেটের একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকে। স্টক মার্কেট একটি কেন্দ্রায়িত বাজার। কিন্তু ফরেক্স মার্কেট বিকেন্দ্রায়িত বাজার। এর কোনো কেন্দ্রীয় বাজার নেই। ফরেক্স মার্কেট হায়ারাকি হচ্ছে- প্রধান ব্যাংকগুলো ইলেকট্রনিক ব্রোকিং সার্ভিসে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাংকগুলো রিটেইল মার্কেট মেকারস এবং কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলো রিটেইল ট্রেডারস। মার্কেটের খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে বড় আকারের ব্যাংকগুলো, কমার্শিয়াল কোম্পানি, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং একক বিনিয়োগকারী।
ফরেক্সের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিরতা আনার প্রয়োজন উপলব্ধি করে। তখন ১৯৭১ সালের দিকে ব্রিটন উডস সিস্টেম চালু হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন কারেন্সির বদলে স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমাতে। কিন্তু তাতে এক্সচেঞ্জ রেটের অস্থিরতা কমলেও ফেয়ার একচেঞ্জ রেট বের করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে কমপিউটার ও নেটওয়ার্কের উন্নতির ফলে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব ট্রেডিং প্লাটফর্ম বানাতে শুরু করে। ১৯৯০ সাল থেকে অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান তাদের ট্রেডিং প্লাটফর্ম হিসেবে ইন্টারনেটকে বেছে নেয়। এরপর থেকেই শুরু ফরেক্সের যাত্রা। ফরেক্সের চর্চা অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা নতুনই বলা চলে। কারণ, অনেকেই এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।
ফরেক্স সম্পর্কিত কিছু পদবাচ্য
ফরেক্সে বেশ কিছু শব্দ বা পদবাচ্য রয়েছে, যার অর্থ নতুনদের জন্য বোঝা কঠিন। তাই ফরেক্সের সাথে যুক্ত শব্দগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে ফরেক্সে আসা উচিত নয়। ফরেক্স বোঝার জন্য এসব শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম। ফরেক্সে অনেক টার্ম বা পদবাচ্য আছে, যা কাজ করতে করতে আপনি জানতে পারবেন। কিন্তু যে টার্ম বা শব্দগুলো জানা না থাকলেই নয়, সেগুলো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
কারেন্সি পেয়ার :
কারেন্সি পেয়ার নিয়ে এখানে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখানে সহজ কিছু উদাহরণের ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। আগেই জেনেছি কারেন্সি পেয়ারগুলোকে কিভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। যেমন : মার্কিন ডলার ও ইউরোর কারেন্সি পেয়ারের সঙ্কেত হচ্ছে USD/EUR। এখন যদি লেখা থাকে ১ USD/EUR = ০.৬৯৩০, তাহলে বুঝতে হবে ১ ডলার দিয়ে আপনি পাবেন ০.৬৯৩০ ইউরো। বিপরীতভাবে যদি লেখা থাকে ১ EUR/USD = ১.৪৪২৮, তাহলে বুঝতে হবে ১ ইউরো দিয়ে কেনা যাবে ১.৪৪২৮ ডলার।
পিপস :
ওপরের কারেন্সি পেয়ারের ব্যাখ্যায় কারেন্সি পেয়ার রেটের বেলায় দশমিকের পরে চার ঘর পর্যন্ত সংখ্যা রাখা হয়েছে। অনেকের মাথায় আসতে পারে এত সূক্ষ্ম করে লেখার কী দরকার? যারা শেয়ার ব্যবসায় করেন, তাদের প্রশ্ন হতে পারে শেয়ারের মূল্য সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় থাকে, যেমন : শেয়ারের মূল্য ৫০ টাকা হতে পারে বা ১০০০ টাকা হয়ে থাকে? খুব কমই শেয়ার দেখা যায় যার মূল্য দশমিক পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু ফরেক্সের বেলায় এত সূক্ষ্ম হিসাবের কী প্রয়োজন? এক্ষেত্রে বলা যায়, শেয়ার হচ্ছে দুটি কারেন্সির অনুপাত, তাই এখানে মুদ্রার মূল্যমানের সূক্ষ্ম পার্থক্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারে আমরা এমনভাবে হিসাব করি না যে, গ্রামীণফোনের শেয়ারের বদলে কতগুলো এয়ারটেলের শেয়ার পাব। শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্যাটাই আসল, যার দাম সাধারণত পূর্ণ সংখ্যায় হয়ে থাকে।